গত বুধবারের (৭ আগস্ট ২০২৪) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জনজীবন’। সংবাদের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর [...] মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে দোকানপাট, ব্যাংক, অফিস, আদালত খোলা ছিল। শহরে অন্যান্য দিনের মতোই যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো এই স্বাভাবিকতা কি আসলেই স্বাভাবিক? আওয়ামী লীগের শাসনামলেও এমন স্বাভাবিকতা ছিল স্বাভাবিক। তখনও দোকানপাট, ব্যাংক, অফিস, আদালত খোলা ছিল, যেমন সচরাচর খোলা থাকে এবং যানবাহন চলতো যেমন আজও চলে। তাছাড়া অনৈতিকতা, অন্যায়, ঘুষ, দুর্নীতি, দমন, পীড়ন, হুমকি, চোরাচালান, মাদকব্যবসা, চুরি, অপহরণ, জবরদস্তি, জবরদখল, লুট, চাঁদা তোলা, জালিয়াতি, ফড়িয়াগিরি, প্রভাবশালী চক্রের দাপট এবং সর্বোপরি রাজনীতিসহ সবকীছুই চলমান ছিল, কীছুই বন্ধ ছিল না।
এই সমাজে এমন অভিজ্ঞজনও আছেন যিনি, এই স্বাভাবিকতার চাদরে ঢাকা দৈনন্দিকতাকে অস্বাভাবিকতার বায়বিকতায় ডুবে থাকা একটি ব্যবস্থারূপে প্রত্যক্ষ করেন, যেমন মাছ ডুবে থাকে জলে। একজন ব্যবসায়ী যিনি আগে ‘ক’কে চাঁদা দিতেন এখন ‘খ’কে চাঁদা দিচ্ছেন। আগে ‘ক’ তোলা তোলতেন এখন ‘খ’ তোলা তোলবেন। কিংবা আগে ‘ক’ নিয়ন্ত্রণ করতেন এখন ‘খ’ নিয়ন্ত্রণ করবেন। এবংবিধ অনুসন্ধানে এই সত্য প্রতিপন্ন হয় যে, প্রতিটি ক্ষমতার রদবদলের তলে আগেকার বদভ্যাসগুলো সমাজে থেকেই যায়, নতুন ক্ষমতায় আসা কেউ সমাজের মুষ্ঠিমেয় প্রভাবশালী লোকের এই বদচর্চার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তোলেন না। এমতাবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পদ সঞ্চয়ের মানসিকতাসঞ্জাত ঘুষ, দুর্নীতি, পরধন লুণ্ঠন ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত থাকাই মানুষের নিয়তি হয়ে পড়ে অর্থাৎ একথায় আত্মসাৎপ্রবণতার দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত হতে পারা মানুষের জন্যে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার পথ সন্ধান করা এখন জাতির জন্য একান্ত জরুরি। তা নাহেলে সামাজিক শান্তি, সুখ, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন কিংবা সমৃদ্ধি, এমন কি রাজনীতিক স্থিতিশীলতা অর্জন জাতির জন্যে সুদূর পরাহতই থেকে যাবে কেবল নয়, সাধারণ মানুষের অবস্থা হবে তপ্ত তাওয়া থেকে জ্বলন্ত উনুনে গিয়ে পড়ার মতো। দেশের মানুষ আর ক্ষমতার রদবদলের রাজনীতির ফাঁদে পড়ে তপ্ত তাওয়া থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়ে পুড়ে মরতে চান না।
দ্বিতীয় বিজয় ও আবার এক নতুন স্বাধীনতা অর্জনের কথা বলা হচ্ছে। এই বিজয় আর স্বাধীনতা যেনো কোনও দলের বিজয় কিংবা স্বাধীনতায় পর্যবসিত হয়ে না যায়। ভুলে গেলে চলবে না, এমনটা হলে, মানুষ আত্মসাৎপ্রবণতার দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে না কীছুতেই এবং পরিণতিতে আবার দেশের চেয়ে দল, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হয়ে উঠবে এবং বোধ করি ছাত্রদেরকে আবার একটি আন্দোলনে নামতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা এই আত্মসাৎপ্রবণতার দাসত্ব থেকে মানুষের মুক্তির পথ করে দেওয়ার পৃথিকৃত হয়ে উঠুন, পুঁজির দাসত্ব থেকে মানুষকে এই জাতিকে মুক্ত করুন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha